উত্তর-উপনিবেশায়ন (Post-colonialism) নিয়ে পড়তে গেলে একজন কৃষ্ণাঙ্গ ফরাসি দার্শনিকের নাম হরহামেশাই দেখা যায়। তিনি আবার সাইকায়াট্রিস্টও ছিলেন। জন্মেছিলেন সে সময়ে যখন ফ্রান্স আলজেরিয়াকে জোর করে দখল করে ছিল। নাম ফ্রাঞ্জ ফাঁনো।
কৃষ্ণাঙ্গ হিসেবে ফাঁনো আর দশটা কৃষ্ণাঙ্গের মতই ফরাসি আগ্রাসিত জাতিরাষ্ট্রে নিগ্রহের স্বীকার হয়েছেন। আপনি যদি মুসলমান হন আর বাঙালি জাতিবাদি কাঠামোতে নিগৃহীত হয়ে থাকেন, তাহলে আমার মত আপনিও ফাঁনোর দর্দ বুঝতে পারবেন।
নিগ্রহের স্বীকার হয়েও তিনি মূলধারায় এসে জুড়ার প্রবল চেষ্টায় এক সময় নিজেকে সাইকায়াট্রিস্ট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। শুধু তাই না, ফরাসি আর্মির মনোচিকিৎসক হিসেবে তিনি কাজ করেছেন। কাজ করতে গিয়ে তিনি বুঝতে পারেন, কলোনাইজেশন জনগণের মননে কীভাবে প্রভাব ফেলে।
তিনি দেখেন উপনিবেশিত জনগণ আসলে আত্মপরিচয়ের সংকটে ভুগে। তার বাপদাদাকে এমনকি তাকেও যারা শোষণ করছে সেই কলোনাইজারকে, তার সংস্কৃতিকেই সে উঁচু ভেবে বসে। শোষিত হয়েও তার মতনই হতে যায়। হীনম্মন্যতায় ভুগে নিজের পরিচয় ও সংস্কৃতি নিয়ে। এই থিম নিয়ে তিনি উপন্যাস লিখেন Black Skin White Mask নামে। উপনিবেশায়ন থেকে মুক্তির পথ নিয়ে যে আলাপ তিনি করেছিলেন বহুবছর পর এক পাগড়িওয়ালার আলাপও তার সাথে মিলে যায়। সেটা ভিন্ন আলাপ।
তো নারীবাদের সাথে ফাঁনোর আলাপ কেন?
পশ্চিমা উপনিবেশায়নের অন্যতম টার্গেট ছিল নারী। একদম ছোট্ট করে বলেন, নারীকে ঘর থেকে বের করে আনা। এ বিষয়ে ফাঁনোর কাজ আছে। অমুসলিম হওয়া সত্ত্বেও তার কাজ আছে। স্কার্ফ-পরা-নারীবাদীরা আসলে ঐ কলোনিয়াল সিন্ড্রোমে আক্রান্ত মানুষগুলোর মতই। নিজের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য নিয়ে সে হীনমন্যতায় ভোগে। ফাঁনোর থেকে শব্দ ধার করে বললে বলা যায়, Brown skin White masks।
এই হীনমন্যতা থেকে সে ইসলামের ঐতিহ্যকে নতুন করে ব্যাখ্যা করে। আধুনিকতার মানসপুত্র মানবতাবাদ ধর্মের পূর্বানুমানে, ভিত্তিতে। তাই ইসলামের ভিত্তির বাইরে এসে তাকে সংজ্ঞায়িত করতে হয় পুরুষকে, নারীকে, এ দুয়ের মাঝে সম্পর্ককে, জেন্ডার রোলকে, জীবনের উদ্দেশ্যকে। এদের যাত্রা শুরু হয় নারীকে ইসলামের ঐতিহ্যে জেঁকে বসা পুরুষতান্ত্রিকতার হাত থেকে মুক্ত করতে হবে এই বয়ান থেকে। যাত্রা শেষ হয় নারীকে ইসলাম থেকে মুক্ত করতে হবে এই বয়ানে। কারণ তার ভিত্তিটাই ছিল ভিন্ন। কলোনাইজারের ভিত্তি। এভাবেই স্কার্ফ-পরা-নারীবাদীরা এক সময় মুক্ত হয়ে উঠে, কলোনাইজারের বাহুডোরে গিয়ে।
মুক্তি, আহ!