“ইসলামের বিরুদ্ধে চীন এতগুলো ফ্রন্ট খুলেছে, কোনটা ছেড়ে যে কোনটা আগে বলব সেটাই বুঝে উঠতে পারছি না! ইসলামের বিরুদ্ধে একেবারে “অলআউট”, যুদ্ধে নেমেছে চীন। ইসলামের নামনিশানা মুছে ফেলতে যা যা করা দরকার মনে করছে, করছে তার সবকিছুই। চীনাদের কাছে ইসলাম হলো মানসিক সমস্যা, এক ধরনের রোগ, ভাইরাস। (নব্য-নাস্তিকেরা ধর্মকে ভাইরাসই মনে করে) তাই এই ভাইরাস দূর করার জন্য মুসলিমদের রিএডুকেশন ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে চিকিংসা করানো দরকার।
মুহাম্মদ, জিহাদ, ইসলাম, আযহার, ইমাম, সাদ্দাম, আরাফাত, ওয়াহহাবের মতো কমপক্ষে ২৯টি নাম নিষিদ্ধ করেছে চীন সরকার। সরকারের মতে এই নামগুলো ইসলামি সংস্কৃতি থেকে এসেছে, এগুলো টীনা সংস্কৃতির সাথে ঠিক যায় না। তাই কোনো মুসলিম এ ধরনের নাম রাখতে পারবে না। উইঘুরদেরকে চাইনিয সংস্কৃতির হাইকোর্ট দেখানো হলেও হান চাইনিযদের ক্ষেত্রে সাতখুন মাফ। ওরা সমানে পশ্চিমা নাম দিয়ে যাচ্ছে বাচ্চাদের, তাতে চীনা সংস্কৃতির কোনো অপমান ঘটছে না। কিন্তু উইঘুররা মুহাম্মাদ বা ইসলাম, নাম রাখলে যেন রাতারাতি গোল্লায় যাচ্ছে চীনা সংস্কৃতি!
ইসলামের বিরুদ্ধে চীনের এ যুদ্ধ শুধু পূর্ব তুরকিস্থানে সীমাবদ্ধ না। বেইজিঙের মুসলিম, দোকান বা রেস্টুরেনটগুলোতে দফায় দফায় অভিযান চালাচ্ছে সরকারি কর্মকর্তারা। না ভেজালবিরোধী অভিযান না; সরকারী নির্দেশনার পরও কোন কোন দোকানে আরবি হরফে হালাল সাইনবোর্ড ঝুলছে সেটা চেক করার জন্য চালানো হচ্ছে অভিযান। মুসলিম দোকান মালিকদের সরকার সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছে-দোকানে আরবি হরফে লেখা “হালাল” সাইনবোর্ড ঝুলাতে পারবে না তারা। সরকারি লোকেরা বারবার মুসলিম দোকান মালিকদের বলেছে, “এগুলো বিদেশি সংস্কৃতি। আপনাদের আরও বেশি বেশি করে চীনা সংস্কৃতির জিনিসপত্র ব্যবহার করতে হবে।”
এতকিছু করার পরেও তৃপ্তি পায়নি নাস্তিক কমিউনিস্ট সরকার। মুসলিম দোকানদার ওপর কড়া নির্দেশ এসেছে, হরেক রকমের মদ আর সিগারেট বিক্রি করতে হবে দোকানে।… সরকারি নোটিশে কাটা কাটা অক্ষরে বলে দেয়া হয়েছে। যেসব দোকানি নির্দেশ মানতে গড়িমসি করবে বা মানবে না তাদের দোকান সিলগালা করে দেওয়া হবে। ট্রেড লাইসেন্স কেড়ে নেয়া হবে, নেয়া হবে আইনানুগ ব্যবস্থা।
আরবি হরফে লেখা হালাল সাইনবোর্ড সরানো বা ইসলামী নাম নিষিদ্ধ করার কারণ হিসেবে চীন দাঁড় করিয়েছে “আরবি আগ্রাসন” এর অজুহাত। সাংস্কৃতিক আগ্রাসান। আরবি হরফ বা ইসলামী নাম চীনাদের বাপ-দাদাদের সংস্কৃতির সাথে যায় না, তাই এগুলো নিষিদ্ধ করতে হবে। হান চাইনিয শুকরগুলির সাথে আমাদের দেশের কথিতসুশীল, সেক্যুলার আর প্রগতিশীলদের কী অদ্ভুত মিল খেয়াল করেছেন পাঠক? হান চীনারা ইসলামী নাম বাতিল ঘোষণা করলেও নিজেরা ঠিকই চীনের সংস্কৃতিকে কাঁচকলা দেখিয়ে নাম রাখছে পাশ্চাত্যের অনুকরণে। চীনাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক বাদ দিয়ে ঠিকই পরছে পাশ্চাত্যের পোশাক। এসবে তাদের সংস্কৃতির কোনো অবমাননা হচ্ছে না! কিন্ত শুধু ইসলামী নাম রাখলেই অবমাননা হয়।
অবাক করা একটা ব্যাপার হলো এই ফালতু যুক্তি বাংলাদেশের মিডিয়া এবং অনেক কথিত সুশীল বুদ্ধিজীবীরাও অনেক দিন ধরে দিয়ে যাচ্ছে। এদের অনেকে টিভি টকশোতে এসে খুব হা-হুতাশ করে বলে, “হিজাবী নিকাবী মহিলাতে ভরে যাচ্ছে আফগানিস্তান পাকিস্তান হয় যাচ্ছে-বাঙলি সংস্কৃতি হারিয়ে যাচ্ছে৷ এ জন্যেই কী একাত্তরে যুদ্ধ করেছিলাম?” কিন্তু দেশের তরুণ-তরুণীরা যখন পাইকারি হারে জিনস, টিশার্ট পরে ফিরিঙ্গি হয়ে যায় তখন সেটা নিয়ে তাদের উৎকঠিত হতে দেখা যায় না। টাইট জিন্স, টি শার্ট বা টপস পরে নারীরা মোটর বাইকে দুদিকে পা ঝুলিয়ে “জাস্ট ফ্রেন্ডদের” জাপটে ধরে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ালে বাঙালি সংস্কৃতির কিচ্ছুটি হয় না। সারা বছর হিন্দী গান শুনলে, চল্লিশটা ভারতীয় চ্যানেল চললে, ভারত থেকে বাইজি নিয়ে এসে স্টেডিয়াম ভর্তি মানুষের সামনে নাচালে কথিত প্রগতিশীল আর সুশীলের জগতে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন হয় না। কিন্তু ইসলামের বিধান পালন করলে বাঙালি সংস্কৃতি হমকির মুখে পড়ে যায়। খুব সাংস্কৃতিক আগ্রাসন হয়।
আসলে চাইনিয হোক বা বাঙালি, মানবতা আর সহনশীলতার ফাঁপা বুলি আওয়ানে পৃথিবীর সব জায়গায় ভণ্ডদের চেহারা একই!”
বই: মুহাম্মদ এনামুল হোসেইন, কাশগড়: কত না অশ্রুজল (ইলমহাউজ, ২০২০) [ঈষৎ পরিমার্জিত]