‘নাস্তিকতা একটি ধর্ম হলে বাগান না করাও একটি শখ, ক্রিকেট না খেলাও একটি ক্রীড়া, কোকেইন সেবন না করাও একটি নেশা।’
এক এক্স-ক্যাডেট নাস্তিকের এই বুলিটি মুক্তমনা মহলে বেদবাক্যের কাছাকাছি বললে অত্যুক্তি হবে না। বুলিটি বলতে চায় নাস্তিকতা কোনো ধর্ম না ঠিক যেমন ক্রিকেট না খেলা কোনো খেলা না।
সচেতন মানুষ এই ভুল সমানকরণে হাসবেন ঠিকই তবে সরল আমজনতা অকাট্য কথা ভেবে ভ্যাবাচেকা খেয়ে বসবে। আমরা আপতত যুক্তিদোষের বিষয়টা এড়িয়ে তার গ্রাউন্ডেই সওয়াল করি।
– আচ্ছা যে ক্রিকেট খেলে না সে কী আর কোনো খেলাই খেলে না? নাকি ক্রিকেট বাদে অন্যকিছু খেলে?
– যার বাগান করার শখ নেই তার কী একেবারেই কোনো শখ নেই? নাকি বই পড়া, ছবি আঁকা, গান করা, ঘুরতে যাওয়া তার শখ?
নাস্তিকতা প্রচলিত একত্ববাদী ধর্ম থেকে সরে আসলেও তারা সেই শূন্যস্থানে অন্যকিছু বসায়, শূন্যস্থান খালি থাকে না।
- স্রষ্টার যায়গায় প্রকৃতি/বস্তুজগত,
- নবীর জায়গায় এনলাইটেনমেন্টের বর্ণবাদি শ্বেতাঙ্গ চিন্তক,
- ওহীর জায়গায় এনলাইটেনমেন্টের চিন্তাবিদদের লেখাজোঁকা,
- থিওক্রেসির জায়গায় সেকুলারবাদ,
- রিলিজিয়াস ভায়োলেনসের জায়গায় সেকুলার ভায়োলেনস ইত্যাদি ইত্যাদি।
(নাস্তিক) লেখক গ্রাহাম লটনের স্বীকারোক্তিতে পাওয়া যায়:
“আসল কথা হলো, নাস্তিকতা কেবলই স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাসের অনুপস্থিতি নয়; বরং বাস্তবতার উৎস ও প্রকৃতি সম্পর্কে বিকল্প বিশ্বাসের সমাহারও বটে। যদিও ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে এই বিশ্বাস ব্যবস্থার উপকরণ ও সত্যায়নের মাত্রা ভিন্ন বলা যায়। তবে উভয়ই সম্ভবত একইরকম মানসিক চাহিদা পূরণে অন্তর্নিহিত অভিন্ন মনস্তাত্ত্বিক প্রক্রিয়ার ফসল। যেমন ধর্মীয় ধ্যানধারণা অনিশ্চয়তার দোলাচলে স্থিতি ও আশ্বাসের বাণী নিয়ে আসে। জীবনের অর্থদ্যোতনা ও নৈতিকতার কাঠামো প্রদান করে। এগুলো ছাড়াও আরো বিভিন্ন কারণে মানব মস্তিষ্কে স্বভাবজাতভাবেই এটি ধরা দেয়। যারা অতিপ্রাকৃত ধারণা প্রত্যাখ্যান করে তাদের সেই খালি যায়গা বস্তুবাদী ধারণাকে শুষে নেয়। … ড. মিগুয়েল ফ্যারিয়াসের ভাষায় বললে নাস্তিকদের বিশ্বাসগুলো, ‘বিকল্প বিশ্বাস হিসেবে কাজ করে, ধর্মীয় বিশ্বাসের মতই তা ধকল ও উদ্বেগ প্রশমনে সাহায্য করে’।”
গ্রাহাম লটন, নিউ সায়েনটিস্ট

পশ্চিমের সেকুলার ধর্মবিদ্যার অধ্যাপক ড. স্টিফেন প্রথেরো-ও লক্ষ্য করেছেন:
“After all, atheism is a religion of sorts, or can be. Many atheists are quite religious, holding their views about God with the conviction of zealots and evangelizing with verve. Atheists take aim at organized religion, miracles, and group-think. They defend reason over revelation, logic over faith, and scientific experimentation over magical thinking. Echoing Confucius and Laozi, they focus on life before death. As the term implies, however, atheism is first and foremost about denying the God proposition… Atheists obviously have a creed. Some atheists deny that they believe anything. Is bald a hair color, they ask? But this denial is disingenuous. In fact, atheism is more doctrinal than any of the great religions. By definition, atheists agree on the dogma that there is no god, just as monotheists agree on the dogma that there is one. Belief is their preoccupation, as anyone who has read even one book on the subject can attest.”
God is not one, ch. 9
অর্থাৎ আমরা বুঝতে পারছি, এক্স-ক্যাডেট সাহেবের কথাটা আসলে এক প্রকারের হাতসাফাই। নাস্তিকতা ধর্মহীনতা নয়, প্রচলিত ধর্মের বিকল্প বিশ্বাসব্যবস্থা। যার অনেক কিছুই বিজ্ঞান দিয়ে যাচাইযোগ্য না।
২২-০৫-২১ । ফেসবুক পোস্ট