“I still don’t understand why people have to get married. If you want to have a person in your life, why do you have to sign marriage papers, why can’t it just be a partnership?”
Mala Yousafzai
সম্প্রতি ফ্যাশন ম্যাগাজিন ভোগ-এ সাক্ষাতকারকালে লিবারেল এক্টিভিস্ট মালালা ইউরোপযাই অবাক হয়ে প্রশ্ন করেছেন, “আমার মাথায় ঢুকে না কিসের জন্য বিয়ে করতে হবে? যদি কাউকে আপনার পছন্দ হয় তাহলে কাবিননামায় স্বাক্ষর করার দরকার কী? লিভটুগেদার করলে সমস্যা কী?”
মালালা’র অবাক হওয়াকে যুক্তিবিদ্যার বিচারে ফ্যালাসি অফ ইনক্রেডিউলিটি বলা যায়। এর অর্থ হলো যে জিনিস কারো মাথায় ধরে না, স্রেফ এই কারণে সেই জিনিসের যৌক্তিকতা অস্বীকার করা। বিয়ে একটি আধ্যাত্মিক, জৈবিক, মানসিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ইউনিট। স্থিতিশীল সমাজ গঠনে বিয়ের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। আধুনিক বিশ্বে যৌনতা মানেই ভোগ, এখানে কোনো দায়িত্ব নেই, নেই দায়বদ্ধতা। ফলে সমাজও হয়ে পড়ে ভঙ্গুর। আমার ২য় একক গ্রন্থ অবিশ্বাসী কাঠগড়ায়-তে এই প্রসঙ্গে রেফারেনসহ আলোচনা করেছিলাম। সেখান থেকে প্রাসঙ্গিক কিছু কথা আনা যায়।
পশ্চিমে সাম্প্রতিককালে বিবাহের সংখ্যা কমেছে ব্যাপক হারে, আর তারি সাথেবিবাহ-বহির্ভূত কাম ও লিভ টুগেদারের ফলে পশ্চিমে জারজের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে অনেক গুণ! ২০০৭ এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৪০% নবজাতক হলো জারজ সন্তান। Eurostat-এর সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী ইউরোপিয় ইউনিয়নে ২০১৬ সালে জন্মানো বাচ্চাদের প্রায় ৪০% ই জারজ বাচ্চা! এই দেশগুলোর ভেতর প্রথম স্থানে আছে ফ্রান্স, প্রতি দশজনে ছয়জনই জারজ বাচ্চা!
এখন কেউ প্রশ্ন করতে পারে—জারজ হলে সমস্যা কী? কারও তো ক্ষতি হচ্ছে না! কিন্তু বাস্তবতা এর বিপরীত। সাম্প্রতিক গবেষণা জানাচ্ছে, বিয়ের আগেই যৌনকর্মে লিপ্ত হওয়া ছেলে-মেয়েদের ডিপ্রেশন ও আত্মহত্যার প্রবণতা প্রায় ৩ গুণ বেশি!
মালালা যে লিভটুগেদারের পক্ষে সাফাই গাইছে, গবেষকদের মতে এই লিভ টুগেদারে থাকা নারী-পুরুষের সম্পর্ক বিবাহের চেয়ে কম টিকে। গবেষক স্ট্যানলি এবং রোডস-এর গবেষণা জানায় যারা বিবাহের পূর্বেলিভ টুগেদার করে তারা নিজেদের বিয়ে নিয়ে কম সন্তুষ্ট থাকে, ফলে ডিভোর্সের সম্ভাবনা বাড়ে (cohabitation effect)। তারা দেখেছেন বাগদানের আগে যারা স্বামীর সাথে লিভ টুগেদার শুরু করে তাদের ডিভোর্সের হার ৪০% বেশি। ড. শীলা কেনেডি ও ল্যারি বাম্পাস এর সাম্প্রতিক গবেষণা জানাচ্ছে, লিভ টুগেদারের ফলে জন্ম নেওয়া বাচ্চাদের ৬৫% তাদের বয়স ১২ হওয়ার আগেই পিতা-মাতার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়; বিবাহিতদের ক্ষেত্রে এই হার ২৪%। কারণ হিসেবে সমাজবিজ্ঞানী মাইকেল পোলার্ড ও ক্যাথলিন এম. হ্যারিস-এর গবেষণার কথা বলা যায়। তারা দেখেছেন, লিভ টুগেদারে থাকা পুরুষ, তার নারী সঙ্গীর তুলনায় সম্পর্কের প্রতি কম প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকে (commitment gap)। ড. জন কার্টিসের উল্লেখ করা সাম্প্রতিক গবেষণার কথাও এখানে বলা যেতে পারে; যা থেকে জানা যায়, লিভ টুগেদারকে নারীরা বিবাহের দিকে এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া হিসেবে দেখলেও, পুরুষরা টেস্ট ড্রাইভ বা মেয়েটাকে একটু চেখে দেখার জন্য লিভ টুগেদার করে। ভার্জিনিয়া ইউনিভার্সিটির ন্যাশনাল ম্যারেজ সেন্টারের পরিচালক ডব্লিউ. ব্র্যাড উইলকক্স বলেন:
❝বিবাহের সাথে তুলনা করলে, লিভ টুগেদারে অঙ্গীকার, স্থিতি, যৌননিষ্ঠা যেমনকম, তেমনি প্রেমসঙ্গি ও তাদের সন্তানদের নিরাপত্তাও কম।❞

বিয়ে না চাওয়া, লিভটুগেদার করতে চাওয়া বঙ্গীয় প্রগতিশীলদের একটি চিত্র ফুটে উঠে নারিবাদি প্রগতিশীল কর্মীর ফেসবুক স্ট্যাটাসে
এসকল ভঙ্গুর পরিবার ও তাতে জন্মানো শিশুরা নানারকম সমস্যার সম্মুখীন হয় এবং সামাজিক নানা সমস্যার কারণ হিসেবে কাজ করে। ভঙ্গুর পরিবারগুলোতে বাচ্চারা যথাযথ যত্ন পায় না, পড়াশোনার সুযোগ কম পায়; এসকল বাচ্চারা কগনিটিভ টেস্টে কম নাম্বার পায়। পাশাপাশি এদের আচরণও মারমুখী হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। এদের একটা বড় অংশ নানা রকম অপরাধ ও নেশায় জড়িয়ে পড়ে। ফলে পুরোসমাজের ওপর এই বিবাহ-বহির্ভূত কামের খারাপ প্রভাব পতিত হয়।(১)
দশকের পর দশক ধরে লিবারেল এবং মডার্নিস্টরা ইসলামী মূল্যবোধের ওপর নিরন্তর আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের মতে বিবাহ-পূর্ব যৌনতাকে নিষিদ্ধ করে ইসলাম যৌন স্বাধীনতার গলা চেপে ধরেছে। অথচ বাস্তবতা হলো যিনার নিষেধাজ্ঞার বিধান মানুষের স্বাধীনতাকে রক্ষা করে। কারণ, এই নিষেধাজ্ঞা ডিভোর্সি, অবিবাহিত নারী এবং সন্তান পালনের অনুপযুক্ত নারী-পুরুষের সন্তানের সংখ্যা সীমিত রাখে। এতে করে শিশুর এবং সমাজের স্বার্থ সুরক্ষিত হয়। বিষয়টা এতই স্পষ্ট যে বিবাহ-পূর্ব যৌনতা নিষিদ্ধের যৌক্তিকতা বোঝার জন্য ধার্মিক হওয়াও জরুরি না। সব ধরনের সমাজ-বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এই বিধানকে সমর্থন করে। কাজেই বিবাহ-পূর্ব যৌনতায় কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, এটা একটা ভ্রান্ত বিশ্বাস।
বিবাহপূর্ব যৌনতাকে ভিকটিমহীন অপরাধ বলা যায় না। যিনা একটা বড় ধরনের অপরাধ। আধুনিক রাষ্ট্র এই অপরাধের লাগামহীন বৈধতা দিয়েছে। ফলে অপরাধের হার বেড়েছে। একইসাথে বেড়েছে সরকারি সহায়তার ওপর নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যা। যিনা ব্যাপকভাবে প্রচলিত হবার আরেকটা দীর্ঘমেয়াদি ফলাফল হলো, রাষ্ট্রের ওপর মানুষের নির্ভরশীলতা বাড়া। আর রাষ্ট্রের ওপর জনগণের নির্ভরতা যত বাড়ে ততই জ্যামিতিক হারে বাড়তে থাকে রাষ্ট্রের ক্ষমতা। এতে দিনশেষে লাভ হয় রাষ্ট্র, ক্ষমতাসীন আর কর্পোরেশানগুলোর। এ কারণেই হাজার হাজার বছর ধরে যৌনতার ব্যাপারে চলে আসা অনুশাসন ও মূল্যবোধ নিয়ে আধুনিক জাতি রাষ্ট্রের কোনো মাথাব্যথা নেই।
যৌনতার ব্যাপার ইসলামী মূল্যবোধ কেন যৌক্তিক এবং সেক্যুলার লিবারেল অবস্থানের চেয়ে নৈতিকভাবে শ্রেষ্ঠতর তা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করা সম্ভব। ডেইটিং কিংবা যিনার ব্যাপার ধর্মীয় যুক্তি কারও মনঃপূত না হলে, এই যৌক্তিক প্রমাণগুলো এই বিধানগুলোর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে যথেষ্ট।(২)
রেফারেনস: (১) রাফান আহমেদ, অবিশ্বাসী কাঠগড়ায় (২) ড্যানিয়েল হাক্বিকাতযু, সংশয়বাদি