Physician | Author | Blogger

রবীন্দ্রনাথ ও উপনিবেশায়নের সিলসিলা

এক নজরে

এক ভাই আমারে শুধাইলো রবীন্দ্রসাহিত্য সম্পর্কে আপনার মত কী?

আমি ফরমাইলাম—দেখেন ভাই, আমি সাহিত্যের ছাত্র না। লিটারেরি ক্রিটিক করার মত চর্চা, ইচ্ছা বা মানসিকতা এখনো তেমন হয় নাই, তবে ভবিষ্যতে ইচ্ছা আছে। কারণ লিটারেরি ক্রিটিক এক প্রকারের দর্শন-ইতিহাস-রাজনীতি চর্চার মত। সময় পাইলে এইদিকে কিছু পড়বো। তয় আমার ফিকির আসলে একটু অন্যদিকে।

আমি যতদূর জানি নোবেল পাওয়ার আগে রবীন্দ্রনাথকে তেমন কেউ গোনায় ধরত না। নোবেল প্রাপ্তি উত্তরকালেও তার কিছু লেখার চৌর্যবৃত্তির সমালোচনা করেছেন বিলেত থেকে নিয়ে এপার ও ওপার বাংলার লোক। সমালোচকদের মাঝে আহমদ ছফাও আছে।

যদিও আমার কাছে এটা কোনো সিগনিফিকেন্ট ইস্যু মনে হয় না। সাহিত্যের ময়দানে অন্যের থেকে নিয়া চালায়া দেয়া বা অনুবাদ করে নিজের নাম দিয়ে দেয়া কমন প্র‍্যাকটিস। হুমায়ুন আহমেদ তার জীবনের প্রথম গল্পেই এই কাম করছিলেন। তার একটা গল্পকে তার বাবা এমনই বদলে দিয়েছিলেন যে সেটা আর তার গল্প বলে চেনার উপায় ছিল না। তারপরও সেটাকে তিনি চিটাগাং কলিজিয়েট স্কুলের ম্যাগাজিনে নিজের নাম দিয়ে ছাপিয়েছিলেন।

আমার কাছে যেইটা ইস্যু সেইটা হইলো, আমার মনে হইছে রবীন্দ্রনাথ পশ্চিমা সাংস্কৃতিক ও মনস্তাত্ত্বিক উপনিবেশায়ন জারি থাকার একটা মাধ্যমে পরিণত হইছিলেন। এর জন্যই হয়তো এই ভদ্রলোক এপার-ওপারে যে পরিমাণ রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠাপোষকতা পাইসেন তার আদ্ধেকও অন্য কোনো সাহিত্যিক পাইসেন বলে মনে হয় না। উপনিবেশি শাসন সরে যাওয়ার পর মসনদে তারাই বসে যারা মননে, মানসিকতায় ও কর্মে পশ্চিমকে ধারণ করে। পশ্চিমা আধিপত্য টিকিয়ে রাখতে গেলে এমন একটি ভদ্রলোকের তমদ্দুন খাড়া করাইতে হয় যা পশ্চিমের আনুগত্য মাইনা নিবে, উপনিবেশের হীনমন্যতা ও অপরায়নতার সিলসিলা জারি রাখবে। এই কামে রবীন্দ্রনাথ সহযোগী আছিল। সেক্যুলার একাডেমিক মোহাম্মদ আজমের এক লেখায় পড়ছিলাম,

“[রবীন্দ্রনাথ] উপনিষদীয় হিন্দুত্বকে এমন নির্বস্তুক ভাষায় অনুবাদ করতে সমর্থ হয়েছিলেন যে, পশ্চিমা লিবারেল হিউম্যানিজমের সাথে কোনোরকম সংঘাতে না জড়িয়ে তা সমান পঙতিতে বসতে পারে”

মানে হইলো, রবিবাবু হিন্দুত্বরে একটি লিবারেল ফর্ম দিসিল। এই ফর্মটারে প্রগতিশীলতার ধ্বজা বানায়া লোকাল মানবতাবাদীরা গিলছে। আপনেরা হয়ত জানেন উনিশ শতকের—বাংলার নবজাগরণ, বাঙালিয়ানা, হিন্দু ভদ্রলোক সমাজ—এর গোড়ায় ছিল পশ্চিমের আলোক থেকে পাওয়া রেসিজম আর ইসলামোফোবিয়া। এই দুই জিনিস উত্তর-উপনিবেশি সাম্রাজ্যবাদ কায়েম রাখার হাতিয়ার স্বরূপ। হয়ত বা এই কারণে এই সামন্তবাদি সাহিত্যিকরে নিয়া এত রাজনীতি।

Share This
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp
Share on email
Related Articles
Recent Articles

রাফান আহমেদ-এর বইসমূহ

আলাদাবইওয়াফিলাইফ

Copyright © Rafan Ahmed

No part of the website or posts can be published elsewhere without prior permission from author.  

Copyright © 2021 All rights reserved

error: Content is protected !!