২০৩০ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি।
আদালতে স্বাক্ষী নেয়া হচ্ছে। আসামি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. সমির সরকার।
বিচারকঃ বলুন ড. সমির সাহেব। আপনি কেন হোসেনের মাংস খেলেন? একজন মৃতব্যক্তির মাংস খেতে আপনার রুচিতে বাধল না!
সমিরঃ দেখুন মিলর্ড, মানুষ স্বাধীন। আমাদের সেসব কাজকে নৈতিক ভাবা উচিত যার দ্বারা সর্বোচ্চ সুখ পাওয়া যায় আর সর্বনিম্ন ক্ষতি হয়। হোসেন আমার বন্ধু, ও মারা যাবার পর আমি ওর মাংস কেটে কেটে রান্না করে খেতে শুরু করি। এতে তো কারো কোনো ক্ষতি হয় নি, আমিও সুখ পেয়েছি।
বিচারকঃ মানে!! আপনার মাথা ঠিক আছে! আপনি তার অনুমতি নিয়েছেন?!
সমিরঃ অনুমতি! মৃতের থেকে! হা হা, আপনি আমাকে হাসালেন মিলর্ড। মৃত পশু খাওয়ার আগে অনুমতি নিয়েছেন কোনোদিন? পশুর সাথে সঙ্গম করতে অনুমতি চান, মারার আগে অনুমতি নেন না কেন!আর আপনি যেহেতু অনুমতির কথা বলছেন, এই নিন-হোসেনের অনুমতিপত্র। সমিরের আইনজীবী বিচারকের টেবিলে কাগজটি পৌছে দিলেন। তার মুখের কোণায় লুকানো ছিল বাঁকা হাসি।
বিচারকঃ কিন্তু না! এটা কোনোভাবেই মানা যায় না। আপনি একজন মানুষকে খেতে পারেন না!
সমিরঃ কেন? কোন যুক্তিতে? মানুষ তো বিশেষ কিছু না। বিবর্তিত বানরমাত্র। মরে গেলে সবশেষ, আমি আপনি ও সে মিশে যাবো মাটিতে। হবো কিলবিল পোকার খাদ্য। খাদ্যশৃঙখলে আমরা সবার উপরে। জগতে যে হারে মানুষ বাড়ছে, সামাল দিবেন কীভাবে? মানুষকে ভক্ষণ এই বিপদের একটা মানবিক সমাধান।
আগে স-ম-কা-মিতা, শি-শু-কা-ম, অজাচার, পশুকাম সব ট্যাবু ছিল। আজ এসব স্রেফ চয়েজ, স্বাধীনতা। বরং এর বিরোধীরা আজকে কোনঠাসা। অথচ আজও নেক্রোফিলিয়া, নেক্রোফেজিয়াকে আপনারা দমিয়ে রাখতে চান। কোন যুক্তিতে? আচ্ছা মৃতদেহের সাথে সেক্সডলের তফাত কোথায়? দুইটাই অনু-পরমাণুর দলা, একটু ভিন্ন বিন্যাসমাত্র। বিজ্ঞান তাই বলছে। আপনি নিশ্চয় কোনো মধ্যযুগীয় ধর্মান্ধ নন যে মানুষ ‘বিশেষ’ কোনো সম্মানিত জীব ভাবেন! প্রাণিজগতের প্রায় ১৫০০ প্রজাতিতে ক্যানিবালিজম দেখা যায়। এগুলা ন্যাচারাল, কোনো বিকৃতি না! আমি, আমরা এভাবেই জন্মিয়েছি, ইন-বর্ন-অরিয়েন্টেশন এটা। আমার মৃতমানব খাওয়ার অধিকার আপনি খর্ব করতে পারেন না।
বিচারকঃ আর ইউ আউট অফ ইউর **কিং মাইন্ড! ইউ ব্লা-ডি পি-গ, সাইকো! আই উইল বারি ইউ ইন্টু দ্য ফা** গ্রাউন্ড। ইউ *** **র!
সমির এই মুহূর্তেরই অপেক্ষা করছিল। সমিরের আইনজীবি মুহূর্তেই দাঁড়িয়ে গেলেন, চিৎকার করে বললেন—আপনি সংখ্যালঘু, মার্জিনালাইজড মানুষকে এভাবে হ্যারাস করতে পারেন না। মুহূর্তের মাঝেই আদালতের দরজা ভেঙ্গে উন্মত্ত জনতা ঢুকে পড়লো। চিৎকার করে বলতে লাগলো –
❝নরখেকোর অধিকার চাই, নরখেকোর অধিকার চাই❞ – ❝উই ওয়ান্ট জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস❞
সমির প্রশান্তি নিয়ে তাকিয়ে আছে দরজার দিকে। প্ল্যান ঠিকমতই চলছে। সাধারণ জনগন বেশে আসা এরা সবাই আসলে নরখেকো। দিন দিন নরখেকোর পরিমাণ বাড়ছে। আর কত লুকিয়ে লুকিয়ে লাশ চুরি করে খেতে হবে? আর কোনো লুকোচুরি না। খোলা বাতাসে শ্বাস নেয়ার সময় এসেছে।
গত কয়েক বছর থেকে বিভিন্ন স্কুল কলেজের ডিবেট ক্লাব আর টিভি সিরিজের দ্বারা নরখাওয়া নিয়ে কাজ চলছে। তরুনদের অনেকেই এখন মনে করে নরখেকো হওয়া দোষের কিছু না। এটা জাস্ট চয়েজ, একটা ওরিয়েন্টেশন মাত্র। অনেকটা মৃতপশু বা মৃত মাছ খাওয়ার মত। অধিকাংশই নিজে যদিও মৃতমানব খাবে না, বাট তারাও এখন বলতে শুরু করেছে—হু আর ইউ টু জাজ? কারো তো ক্ষতি হচ্ছে না।
নেক্সট স্টেপ হলো, কিছুদিন পর থেকে যারা নরখাওয়ার বিরোধীতা করবে তাদের নেক্রোফোবিক বলা শুরু হবে। ফান্ডিং আছে যথেষ্ট। প্ল্যানটা কাজে লাগবে আশা করি।
সমির বুক ভরে শ্বাস নেয়। অদ্ভূত এক গন্ধ তার নাকে এসে লাগে। আহ! এটাই কি স্বাধীনতার গন্ধ? সমিরের মনে হচ্ছে এই গন্ধটা সে কোথাও পেয়েছে। হ্যা, মনে পড়েছে। হোসেনের পে-টে-র চর্বিযুক্ত মাংস বার-বি-কিউ করার সময় এমন গন্ধ এসেছিল। আহ! বুক ভরে শ্বাস নিয়ে সমির অস্ফুট স্বরে বলে উঠলো –
You may write me down in history
With your bitter, twisted lies,
You may trod me in the very dirt
But still, like dust, I’ll rise.
ফিচার ইমেজ: নিয়াজ আহমদ খান