অনেকে বলেন আমার সমালোচকদের আমি তৎক্ষণাৎ উত্তর দিই না কেন, অথচ তারা এত চেষ্টা করে আমার মনোযোগ পেতে? কারণ খুব সহজ, একেতো আমি সময় কম পাই। নিজের পড়াশোনা, লেখার কাজে এক্সট্রা পড়া, পরিবারকে সময় দেয়া এত কিছু করে এদিকে দেখার মত সময় ইচ্ছা কোনোটাই হয় না। তাছাড়া এরা মূলত চরিত্রহননের জন্য নিজস্ব বায়াস থেকে সমালোচনার নামে রিডিকিউলের হাটবাজার বসায়। তাই এদের পাত্তা দেয়াটাই অর্থহীন।
যেমন একটা প্রমাণ দেখাই। কোনো এক গ্রুপের রিচ কমে যাওয়ায় (তাদের লোকই স্বীকার করেছে) আমাকে নিয়ে যথারীতি রিডিকিউল শুরু করেছে। আমার বইতে আমি মাইকেল ক্রেমোর একটি লেকচার ও বইয়ের রেফারেনস দিয়ে বলেছি অনেক ফসিল এমন আছে যা বিবর্তনের প্রচলিত বয়ানের সাথে মেলে না, তাই সেগুলোকে আমলে নেয়া হয় নাই। এগুলোর মাঝে কিছু এমন আছে যেগুলো আসলেই সমাধা করা মুশকিল। অনেকগুলো আবার বিতর্কিত। বিজ্ঞানের দার্শনিক হয়ত বলবেন এটা থিওরি লেডেননেস এর উদাহরণ।
অন্ধ সমালোচনায় প্রবৃত্ত হয়ে সমালোচক বলছে মাইকেল ক্রেমোর প্রায় ঘন্টাব্যাপী লেকচারে নাকি কোনো প্রমাণ পায় নাই! অন্ধ বলতে বাধ্য হলাম কারণ ক্রেমো পুরো লেকচারেই স্লাইড দিয়ে এভিডেনস দেখিয়েছে, প্রাইমারি লিটারেচার থেকে। তার বক্তব্য থেকে এটাও পরিষ্কার ধর্মীয় এজেন্ডা থেকে ফসিল দেখা তার মূল উদ্দেশ্য না। বরং সে মনে করে এই ফসিলগুলো সঠিক হলে মানুষের উৎপত্তির সাথে বেদের ধারণা মিলে।

আমি লেকচারটা দেখার পরে ক্রেমোর বই আনাই বাইরে থেকে। এক প্রিয়ভাই গিফট করে আমাকে। আমি বলতেছি না ক্রেমোর সব কথা ঠিক, আমিও অনেক কিছুতে একমত হবো না হয়ত। বই পড়ে অল্পকিছু ব্যতীক্রমি ফসিল নথির কথা উল্লেখ করেছি। সমালোচক সেই বই পড়ার প্রয়োজনই অনুভব করে নাই। আমার বইয়ের রেফারেনস অংশে আমি সেই বই থেকে কিছু অংশ তুলেও দিয়েছিলাম। তাও দেখে নাই, আগেই বলে দিছে “প্রমাণ ছাড়া”। মজা হইলো এই পুরো আলাপকে খারিজ করা জন্য সে অন্য উদাহরণ টেনে নিয়ে আসছে, যেগুলো আমি উল্লেখই করি নাই। জেনেটিক ফ্যালাসি ও স্ট্রম্যানিং এ এরা খুবই পারঙ্গম।
এই গ্রুপটা সম্ভবত চায় মানুষ যেন তাদের বলয়ের বাইরে না ভাবে, সবসময় একই বলয়ে অনুগত থাকে। এর আগেও আমাকে নিয়ে অত্যন্ত নগ্ন অপপ্রচার ও চরিত্র হনন করা হয়েছে। এতই মাত্রাতিরিক্ত ব্যক্তিআক্রমণ করা হয়েছে যে সেই গ্রুপের অন্যতম একজন সাবেক সিনিয়র মডারেটর আপসেট হয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছে:

আবু রায়হান শুরু থেকেই এসকল অপপ্রচার ও ব্যক্তিআক্রমন দেখে এসেছে। প্রায় বছর পেরিয়ে গেছে। তাই এতদিনের ক্ষোভ ঝরে পড়েছে পোস্টে।

এরপর গ্রুপের প্রধান আমাকে নিয়ে সাইবার বুলিং এর বন্যা বইয়ে দিয়েছেন। নিচুশ্রেনীর অপবিজ্ঞান প্রচারক, বিজ্ঞান-ধর্ষক এসব বর্ণবাদী মন্তব্য দিয়ে বেড়াচ্ছেন। কিছুদিন আগে আমাকে গুম করার জন্যও উস্কানি দিয়েছেন। এসবের মানে বুঝলাম না। এত উগ্রতা কেন? কেন এত অসহিষ্ণুতা, জিঘাংসা?
এবার হাড়ি-পাতিল বিতর্কে আসি। এই বিষয়ে আসার আগে আমার বইয়ের মূল বক্তব্যটা বুঝতে হবে। বইয়ের নতুন সংস্করণ থেকে আমি কিছু স্ক্রিনশট দিচ্ছি। বিসিবির অভিযোগ আসার আগেই বইয়ের এই সংস্করণ প্রকাশিত হয়। (ছবিগুলো দেখতে বামে স্লাইড করুন)
লক্ষ্য করুন বিবর্তনের ক্ষেত্রে পক্ষপাত তথা টেম্পোরাল বায়াসের যে স্বীকারোক্তি উল্লেখ করেছি তা দিয়েছেন প্যালিও-অ্যান্থ্রোপলজিস্ট বার্নার্ড উড। বর্তমানে বিবর্তনের ময়দানে গুরুত্বপূর্ণ একজন অথরিটি হলেন বিবর্তনবাদি এই গবেষক। তার স্বীকারোক্তি দেয়ার পরও সাইবার বুলিং থামে নি। এরপর সাম্প্রতিক কিছু নমুনা উল্লেখ করেও দেখানো হয়েছে টেম্পোরাল বায়াস কীভাবে ক্রিয়াশীল। এরপরে অতীতের রেকর্ডের আলাপ আনা হয়েছে সেটা সঠিক না ভুল সেই জাজমেন্ট দেয়া ছাড়া। একইরকম কাজ করেছেন বিজ্ঞান লেখক হাসান উয জামান শ্যামল। সময় পেলে বিসিবি গ্রুপে আসা বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। তার বই এটাই সায়েনস-এও তিনি মাইকেল ক্রেমোর বই নিয়ে একটি সেকশন লিখেছেন। ক্রেমোর দলিল সঠিক না ভুল সেই জাজমেন্ট দেয়া ছাড়া। তাহলে কি তিনিও নাইম হোসেন ফারুকীর মতে বিজ্ঞান-ধর্ষক?

এবার ক্রেমোর বই থেকে সংশ্লিষ্ট কিছু অংশ তুলে দিচ্ছি। সঠিক না ভুল সেই জাজমেন্ট করছি না। পপুলার সায়েনস বইতে ফিল্ডে বিদ্যমান বিভিন্ন মত উল্লেখ করা হয়। আমিও সেটা করেছি। (ছবিগুলো দেখতে বামে স্লাইড করুন)
আমেরিকার জিওলজিস্ট বেকারের মূল পেপারের ছবিটি দেয়া হলো:

এই বিষয়ে সঠিক বা ভুল মত দেয়া আমার পক্ষে মুশকিল। তাই উল্লেখ করেছি, বলেছি সঠিক হলে চিন্তার সুযোগ তৈরি হয়। কিন্তু তা বিসিবির পছন্দ হয় নি। তাই নাইম হোসেন ফারুকী আমাকে গুম করাতে চাচ্ছেন, ফলে হয়ত আমার স্ত্রীকে বিধবা করাতে চাচ্ছেন, আমার সন্তানকে বাবা-হারা করাতে চাচ্ছেন। কেন এত ধ্বংসস্পৃহা?!?
যাই হোক, কিছুদিন আগে হেকেলের ভ্রূণতাত্ত্বিক প্রমাণ নিয়ে পোস্ট দিয়ে সেই সমালোচক আমার মনোযোগ আকর্ষণের খুব চেষ্টা করেছে। আমার একজন পাঠক আমার বইয়ের পুরো আর্গুমেন্ট বুঝে মেসেঞ্জারে খুব আফসোস করলেন-বরাবরের মতই খণ্ডিত অভিযোগ আর চরিত্রহনন দেখে। আমি সময় পেলে আরেকদিন এটা নিয়ে লিখবো।
সবার জন্য শুভকামনা।