Physician | Author | Blogger

সলিমুল্লাহ খানের রহস্যভেদ

এক নজরে

২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকার শাহবাগে “গণজাগরণ মঞ্চ” বলে একটি সেকুলার সমাবেশ গড়ে ওঠে। একাত্তরে যারা বাংলাদেশ গঠনের বিরোধিতা করেছিল তাদেরকে “যুদ্ধাপরাধী” কিংবা “মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধী” সাব্যস্ত করে সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দাবিতে এই সমাবেশ দীর্ঘদিন ধরে চলেছিল ।

সলিমুল্লাহ খান এই শাহবাগ আন্দোলনের একজন তত্ত্বায়নকারী হিসেবে হাজির হলেন। সর্বজন নামক একটি অনলাইন প্রকাশনায় তিনি এই শাহবাগ আন্দোলনের সেক্যুলার, বাঙালি জাতিয়তাবাদী চেতনাকে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাপত্রের তিন আদর্শের আলোকে ব্যাখ্যা করতে লাগলেন । তার এই সর্বজন ধারণার মধ্য দিয়ে তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদের ধ্রুপদী পরিসরকে আরো অন্তর্ভুক্তিমূলক করে তুললেন। অর্থাৎ সেখানে ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বা, নারী ইত্যাদি বর্গকে জায়গা করে দিলেন বা আগের চাইতে বেশি স্পষ্ট করে তুললেন।

তাত্ত্বিকভাবে এসব প্রসারণমূলক সংযোজনা তিনি করলেন ঠিকই কিন্তু তিনি সমকালীন দেশি-বিদেশি রাজনীতির পক্ষ-বিপক্ষ নির্বাচনে বিরাট ভুল করে বসলেন। তিনি এই পপুলিস্ট বিচার কার্যক্রমের আড়ালে পরিচালিত ভারতীয় আধিপত্যবাদ নির্দেশিত নির্বাচন ব্যবস্থাসহ গণতন্ত্র-বিধ্বংসী ফ্যাসিবাদী উত্থানকে চিহিত করতে ব্যর্থ হলেন। ফলে তিনি যে রাজনৈতিক অবস্থান নিলেন, তা যুদ্ধাপরাধের বিচারের মধ্য দিয়ে এদেশে রাজনৈতিক ইসলাম ও মধ্যপন্থী মুসলিম স্বাতন্ত্র চেতনা নির্মূলের রাজনীতিকে প্রশ্রয় দিয়েছে।

একারণে আমরা দেখলাম, এদেশের মারাত্মক পক্ষপাতমূলক টেলিভিশন মিডিয়াতে তিনি একজন নিয়মিত টক-শো আলোচক/বিশ্লেষক হিসেবে তার এই সেক্যুলার বাংলাদেশের বয়ান গাইছেন আর সেটা আল্টিমেটলি আ ও য়া মী অ প শা স ন কেই জাস্টিফাই করছে। তার তাত্ত্বিক অবস্থান যতই সহিহ মনে হোক না কেন, তার বাস্তবিক রাজনৈতিক অবস্থান মজলুমের বিরুদ্ধে জালিমের অবস্থানকে শক্তিশালী করেছে । কারণ তিনি আসলে ডিপ মার্কসবাদে নোঙর করে বাকিসব উত্তরাধুনিক তত্ত্ব চর্চা করেন। ফলে তিনি একাত্তরের যে ব্যাখ্যা ও বয়ান খাড়া করেন তা এদেশের নাগরিকদের আকাঙ্ক্ষিত মুসলিম স্বাতন্ত্রচেতনাকে অগ্রাহ্য করে এবং এক আরোপিত সেক্যুলার বাংলাদেশ চাপিয়ে দিতে চায় ।

কাজী নজরুল ইসলামের ওপরে তার লেখা এক প্রবন্ধে ও একটি টক শোতে তিনি পরিষ্কার করে বলেছেন যে বাংলাদেশের জন্য তুরস্কের মোস্তফা কামাল পাশা অনুসৃত সেক্যুলার আধুনিকায়নের পথই শ্রেয়। বাংলাদেশের কন্টেক্সটে তিনি হয়তো হেফাজতে ইসলামের মতো অরাজনৈতিক, সামাজিক, আধ্যাত্মিক ও মাদরাসা শিক্ষাভিত্তিক উলামাদের সঙ্গে একধরনের বুঝাপড়া মেনে নেবেন; কিন্তু ইসলামের রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রনৈতিক প্রকাশ ও বিকাশের কোনো পরিসর তার চিন্তাকাঠামোতে নেই । এদিক থেকে বলা যায় তার রাজনীতির মূল যেহেতু ডিপ মার্কসবাদ, তাই তার রাজনীতি আপাতদৃষ্টিতে অনেক ইনক্লুসিভ শোনালেও তা শেষপর্যন্ত ইসলামিকতাকে যথেষ্ট জায়গা দেয় না; এবং প্রকারান্তরে আ ও য়া মী লীগের তন্তাবধানে এদেশে ইন্দো-পশ্চিমা ইসলামোফোবিক ওয়ার অন টেরর প্রজেক্টকেই অনুসমর্থন দেয় ।


মনোয়ার শামসী সাখাওয়াত, বাঙালি মুসলমানের বয়ান ও প্রতিবয়ান, পৃ .২২৮-২২৯ (সিস্টেক প্রকাশনী, ২০২১)

Share This
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp
Share on email
Related Articles
Recent Articles

রাফান আহমেদ-এর বইসমূহ

আলাদাবইওয়াফিলাইফ

Copyright © Rafan Ahmed

No part of the website or posts can be published elsewhere without prior permission from author.  

Copyright © 2021 All rights reserved

error: Content is protected !!